ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিএনপির গণঅবস্থান: ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা 

বিএনপির গণঅবস্থান: ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা 

আগামী ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবির পাশাপাশি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বৃদ্ধির সরকারি উদ্যোগের প্রতিবাদে এ সমাবেশ হবে।

আজ বুধবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় গণঅবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এসময় বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার অন্যায়ভাবে গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। জনগণ আর পারছে না। ১৬ জানুয়ারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে কেন্দ্রসহ জেলা, উপজেলা, মহানগর, পৌরসভায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।

১০টি বিভাগীয় শহরে (সাংগঠনিক বিভাগ) বিএনপি ঘোষিত গণঅবস্থান কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে বুধবার বেলা সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি শুরু হয়৷ এতে সভাপতিত্ব করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

১০ দফা দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে বিভিন্ন দল ও জোট গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছে। আজকের গণঅবস্থান ছিল তাদের দ্বিতীয় যুগপৎ কর্মসূচি। বেলা আড়াইটায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, সারা দেশের জনগণ জেগে উঠেছে। আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এই আন্দোলন আজকের নয়; এই আন্দোলন শুরু হয়েছে তখন থেকে, যখন থেকে বেআইনিভাবে দুই-দুইবার ভোট ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে বেআইনিভাবে জোর করে তারা ক্ষমতা দখল করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানি, আওয়ামী লীগ একটি অত্যন্ত পরিচিত পুরোনো দল। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখন সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে; আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের এখন পুলিশের ওপর নির্ভর করে, আমলাদের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে হচ্ছে।’

আজ সব রাজনৈতিক দল একত্র হয়েছে-উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য সব দল একমত হয়েছে। তারা ১০ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে এই আন্দোলন সফল করবে।

তিনি বলেন, অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সাধারণ মানুষ আজ বলছে, তারা আর পারে না । চাল কিনতে পারে না। খাদ্য কিনতে পারে না। ওয়াসার এমডি আমেরিকায় ১৪টি বাড়ি কিনেছে। তিনি কত হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। আজকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তারা সব ব্যাংক লুটে ফোকলা করে দিয়েছে। সরকার লুটের রাজ্য গড়ে তুলেছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে আবারও একদলীয় শাসন কায়েম করা। আমরা সেটা হতে দেব না। আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আজকে জনগণ জেগে উঠেছে; সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জেগে উঠেছে। গণমাধ্যমও ভূমিকা রাখছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেও ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ বানচাল করা যায়নি; ঢাকাসহ দেশের মানুষ সফল করেছেন। আসুন, আমরা ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হই।

জামিনে মুক্তি পাওয়ার দুই দিন পরই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ ঢাকার এ গণঅবস্থানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন। বেলা সাড়ে ১১টায় কর্মসূচিস্থলে পৌঁছান মির্জা ফখরুল। নেতা-কর্মীরা স্লোগান ও করতালিতে তাকে স্বাগত জানান। সদ্য কারামুক্ত আরেক নেতা মির্জা আব্বাসও উপস্থিত হন গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে।

গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘিরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হন। দুপুরের আগেই নেতাকর্মীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে নয়াপল্টন এলাকা। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছোট মঞ্চ থেকে নেতারা বক্তব্য দেন।

নেতা-কর্মীদের ভিড় একপাশে ফকিরাপুল ছাড়িয়ে দৈনিক বাংলা মোড়, আরেকপাশে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় ছাড়িয়ে যায়। সড়কের একপাশে অবস্থান নেওয়ার কথা থাকলেও নেতাকর্মীদের ভিড়ে সড়কের দুই পাশের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গণ-অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল। কাকরাইল ও ফকিরাপুল মোড়ে জলকামান নিয়ে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেন। এর বাইরেও বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন ছিল।

এদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চ, পূর্বপ্রান্তে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, আরামবাগের ইডেন কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণফোরাম, বিজয়নগরের পানির ট্যাংকের কাছ থেকে ১২ দলীয় জোট, পুরানা পল্টনে সমমনা জাতীয়তাবাদী জোট এবং কারওয়ান বাজারে এফডিসির কাছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এলডিপিও আলাদা আলাদাভাবে একই কর্মসূচি পালন করে। তবে এসব দল ও জোটের কর্মসূচিতে উপস্থিতি ছিল কম। ঢাকার বাইরে ফরিদপুর ও ময়মনসিংহে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ করা হয়েছে।

এর আগে ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা ও রংপুর বাদে সব জেলা ও মহানগরে এবং ৩০ ডিসেম্বর ঢাকা ও রংপুরে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যুগপৎভাবে গণমিছিল করে। তার আগে বিএনপি রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা ও ২৭ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে।

গণঅবস্থান,বিএনপি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত